তানভীর সানি
১৭ নভেম্বর, ২০২৫, 11:32 PM
রাজনৈতিক ও বিচারবৈধতা দৃষ্টিকোণ থেকে রায়-এক মাইলফলক, নাকি উভয়পক্ষের জন্য বিপদসঙ্কেত
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ সোমবার (১৭ নভেম্বর ২০২৫) তারিখে শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালের বিরুদ্ধে জুলাই-আগস্ট ২০২৪ গণঅভ্যুত্থানকে কেন্দ্র করে অপরাধ স্থায়ী ঘোষণা করে, মৃত্যুদণ্ডসহ কঠোর শাস্তি দিয়েছে।
রাজনৈতিক প্রভাব ও বৈধতা:
এই রায় হলো দেশের রাজনীতিতে এক প্রধান মাইলফলক: ক্ষমতাচ্যুত নেতাকে শাস্তি দিতে একটি বিচারপ্রক্রিয়া কাজ করেছে বলে আদালত এবং মধ্যবর্তী সরকারের পক্ষ থেকে দাবি উঠেছে।
তবে বিরোধীদের দৃষ্টিকোণ থেকে এটি রাজনৈতিক প্রতিশোধ হতে পারে বলে উদ্বেগ রয়েছে। আদালতের প্রশস্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনা – সেনাবাহিনী, গোয়েন্দা, পুলিশ-রায়ের দিন ছিল অত্যন্ত কড়াকড়ি।
দেশজুড়ে এই রায় রাজনৈতিক দৃষ্টান্ত তৈরি করবে-বিচার ব্যবস্থার ওপর মানুষের আস্থা বৃদ্ধির সুযোগ, কিন্তু একইসাথে দেশ আরও বিভাজিত হতে পারে যদি অনেকেই এই রায়ে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য খুঁজতে শুরু করে।
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার ও বিচারবিজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ:
আদালত “সুপিরিয়র কমান্ড দায়িত্ব” ও “জয়েন্ট ক্রিমিনাল এন্টারপ্রাইজ” ভিত্তিক ভিত্তিতে অপরাধ প্রমাণ করেছে।
রায়ে বলা হয়েছে, হাসিনা তার নির্দেশনায় ভয়-ভীতি ও প্রাণঘাতী অস্ত্র (ড্রোন, হেলিকপ্টার) ব্যবহারে ভূমিকা রেখেছেন, যা গণঅভ্যুত্থান দমনে “সর্বোচ্চ শাস্তি ছাড়া বিচারপরিপূর্ণতা সম্ভব নয়” এমন সিদ্ধান্তে বিচারকরা পৌঁছেছেন।
বিচারপ্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা ও প্রক্রিয়াগত ন্যায় আরও পরীক্ষা হওয়া উচিত। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এটি বিচারপ্রদানের মান উন্নয়নের দৃষ্টান্ত হতে পারে, কিন্তু পাশাপাশি রাজনৈতিকভাবে প্রভাবিত মামলার আশঙ্কাও উত্থাপিত হবে।
সামাজিক প্রতিক্রিয়া ও উত্তেজনা:
রায় ঘোষণার সময় আদালতে নিহতদের পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন; এটি সমাজে “ন্যায় পেয়েছে” এমন অনুভূতির প্রতিফলন।
অন্যদিকে, রাজনৈতিক উত্তেজনা বাড়ার সম্ভাবনা কম নয়-শাসনতন্ত্র ও বিরোধীদের মধ্যে প্রতিক্রিয়া তীব্র হতে পারে, যা আগামী সময় দেশকে আরও অস্থিতিশীল করতে পারে।
বিচার শেষে সম্পদ বাজেয়াপ্তি এবং বিদেশে পালিয়ে থাকা আসামিদের ফেরত আনার প্রয়াস সরকার ও বিচারব্যবস্থার সামনে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে।
সিদ্ধান্ত:
এই রায় শুধু এক ইতিহাসগড়ার ঘটনা নয়; এটি বাংলাদেশের রাজনীতি, বিচারব্যবস্থা ও সামাজিক স্থিতিশীলতার জন্য একটি সংকেত। যথার্থভাবে বিচারপ্রক্রিয়া চালিয়ে গেলে এটি রাষ্ট্রের আইনগত ও মানবাধিকার অঙ্গনে ইতিবাচক প্রভাব রাখতে পারে। তবে রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া, দেশের অভ্যন্তরীণ বিভাজন এবং আন্তর্জাতিক ন্যায্য বিচার-মান নিয়ন্ত্রণ এখনও বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে থাকবে।