আন্তর্জাতিক ডেস্ক
০১ ডিসেম্বর, ২০২৫, 12:50 PM
ট্রাম্পের ‘আকাশসীমা বন্ধ’ ঘোষণার নিন্দা ভেনেজুয়েলার, উত্তেজনা বাড়ছে ল্যাটিন আমেরিকায়
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ভেনেজুয়েলা ও দেশটির আশপাশের আকাশসীমাকে ‘সম্পূর্ণভাবে বন্ধ’ ঘোষণা করেছেন—এমন মন্তব্যের তীব্র নিন্দা জানিয়েছে কারাকাস। শনিবার ভেনেজুয়েলার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে ট্রাম্পের বক্তব্যকে ‘ঔপনিবেশিক হুমকি’ হিসেবে অভিহিত করেছে। খবর আলজাজিরার।
বিবৃতিতে বলা হয়, ভেনেজুয়েলার আকাশসীমার সার্বভৌমত্ব ক্ষুণ্ণ করার এই ঘোষণা অযৌক্তিক, বেআইনি ও দেশটির জনগণের বিরুদ্ধে এক ধরনের আগ্রাসন।
নিজের ট্রুথ সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে ট্রাম্প লিখেছিলেন—“সব এয়ারলাইন্স, পাইলট, মাদক ব্যবসায়ী ও মানব পাচারকারীদের উদ্দেশে বলছি, ভেনেজুয়েলা এবং দেশটির আশপাশের আকাশসীমা সম্পূর্ণভাবে বন্ধ বলে বিবেচনা করুন।”
গত কয়েক সপ্তাহ ধরে ট্রাম্প প্রশাসনের কর্মকর্তারা ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোকে লক্ষ্য করে কঠোর ভাষায় মন্তব্য করে আসছেন। মার্কিন পক্ষের দাবি—তারা মাদক পাচার রোধে ব্যবস্থা নিচ্ছে। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, যুক্তরাষ্ট্র আসলে মাদুরোকে ক্ষমতা থেকে সরানোর কৌশল নিচ্ছে।
ক্যারিবীয় সাগরে যুক্তরাষ্ট্র ইতোমধ্যে একটি বিমানবাহী রণতরী মোতায়েন করেছে। মাদক পাচারের অভিযোগ তুলে জাহাজে বিমান হামলাও চালিয়েছে। জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা এসব পদক্ষেপকে ‘বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড’ বলে উল্লেখ করেছেন।
এই সপ্তাহেই ট্রাম্প বলেছেন—তিনি খুব শিগগির মাদক উৎস দমনে ভেনেজুয়েলায় স্থল অভিযান শুরু করবেন।
সাম্প্রতিক মাসগুলোয় ভেনেজুয়েলার ওপর যুক্তরাষ্ট্রের চাপ বাড়ছে আরও তীব্রভাবে। গত আগস্টে ওয়াশিংটন ঘোষণা করে—মাদুরোর গ্রেপ্তারে তথ্য দিলে ৫ কোটি ডলার পুরস্কার।
এ সপ্তাহে ‘কার্টেল দে লস সোলেস’-কে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয়।
মার্কিন দাবি, ভেনেজুয়েলার উচ্চপদস্থ সামরিক কর্মকর্তাদের নিয়ে গঠিত এই নেটওয়ার্কের সঙ্গে মাদুরোর সম্পর্ক রয়েছে।
‘কার্টেল দে লস সোলেস’ শব্দটি প্রথম ব্যবহৃত হয় ১৯৯০-এর দশকে—মাদকপাচারে জড়িত ও সম্পদশালী হয়ে ওঠা সামরিক কর্মকর্তাদের বোঝাতে।
দ্য নিউইয়র্ক টাইমস জানায়, সম্প্রতি ট্রাম্প মাদুরোর সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন এবং সম্ভাব্য বৈঠক নিয়েও আলোচনা হয়েছে। যদিও এখনো এমন বৈঠকের কোনো নিশ্চিত পরিকল্পনা নেই। যদি বৈঠকটি হয়, তবে তা হবে মাদুরো ও কোনো মার্কিন প্রেসিডেন্টের মধ্যে প্রথম সরাসরি আলোচনা।
আলজাজিরার ল্যাটিন আমেরিকা সম্পাদক লুসিয়া নিউম্যান মন্তব্য করেন—“ট্রাম্প ভেনেজুয়েলা নীতিতে কখনো খুব কঠোর, আবার কখনো নরম। আকাশসীমা বন্ধ ঘোষণা পরিস্থিতি উত্তপ্ত করেছে, তবে সরাসরি সামরিক হামলার সম্ভাবনা এখনো স্পষ্ট নয়।”
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন—যুক্তরাষ্ট্রের এই অবস্থান ভেনেজুয়েলার জনগণের ওপর গভীর প্রভাব ফেলবে।
দেশটির নাগরিকরা ইতোমধ্যে বছরের পর বছর ভুগছে—তীব্র দারিদ্র্য, বেকারত্ব, রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা, ব্যাপক অভিবাসন সঙ্কটে
প্রতিবেদনে বলা হয়, নতুন বৈরী নীতি পরিস্থিতিকে আরও সংকটময় করতে পারে।