তানভীর সানি
২৫ জুলাই, ২০২৫, 9:50 PM
পাঁচ মাসেও নেই স্পষ্ট নীতি, প্রশ্নবিদ্ধ এনসিপির রাজনৈতিক দিকনির্দেশনা"
গণঅভ্যুত্থান ঘিরে আলোচিত ছাত্রনেতারা দল গঠনের ঘোষণা দেন ‘জাতীয় নাগরিক পার্টি’ বা এনসিপি নামে। আত্মপ্রকাশের পর প্রায় পাঁচ মাস পেরিয়ে গেলেও দলটির পক্ষ থেকে এখনো কোনো সুস্পষ্ট রাজনৈতিক মতাদর্শ বা নীতি ঘোষণা করা হয়নি।
বদলে, দলটির কর্মসূচি ও বক্তব্যে বারবারই উঠে এসেছে কেবল আওয়ামী লীগবিরোধিতা-যা নিয়ে উঠছে নানা প্রশ্ন। বিশেষ করে রাজনীতির বিশ্লেষকদের মতে, একটি নবীন রাজনৈতিক দল আদর্শ ছাড়া শুধু বিরোধিতার মাধ্যমে টিকে থাকতে পারে না।
এনসিপির কর্মসূচিতে কোথাও কোথাও দেখা গেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহযোগিতা, এমনকি অতিরিক্ত নিরাপত্তা নিশ্চিত করাও। এ নিয়ে রাজনৈতিক মহলে প্রশ্ন উঠেছে-সরকারবিরোধী একটি নতুন রাজনৈতিক দল কি রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থার ‘সহযোগিতা’ পাওয়ার কথা?
অনেকে এটাকে রাজনৈতিক মেকআপ বলেও আখ্যা দিচ্ছেন। যদিও এনসিপি নেতা-কর্মীরা এই অভিযোগ সাফভাবে অস্বীকার করেছেন। তাঁদের ভাষ্য, সংবিধান অনুযায়ী সব দলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করাই রাষ্ট্রের দায়িত্ব।
দলটির শীর্ষ নেতারা বলছেন-তাদের একমাত্র লক্ষ্য হলো বাংলাদেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা, জনগণের অধিকার নিশ্চিত করা এবং মানবিক মর্যাদা রক্ষা। সেই সঙ্গে তাঁরা দাবি করেছেন, আওয়ামী লীগের অপরাধের বিচার এখন তাদের কর্মসূচির একটি অংশ মাত্র।
কিন্তু বিশ্লেষকরা বলছেন, ‘কাজে’ এনসিপির রাজনৈতিক অবস্থান অনেকটাই প্রতিপক্ষভিত্তিক। একটিও সুসংগঠিত, ভিশনভিত্তিক নীতিগত ঘোষণাপত্র এখনো জাতির সামনে আনা হয়নি। এক গবেষক মন্তব্য করেন - দর্শন ছাড়া রাজনীতি কেবল প্রতিবাদে আটকে যায়, প্রভাব বাড়াতে হলে দীর্ঘমেয়াদে আদর্শের ভিত্তি থাকা জরুরি।
বাংলাদেশের রাজনীতিতে বিরোধিতা নতুন কিছু নয়। তবে শুধুই আওয়ামী লীগবিরোধিতার প্ল্যাটফর্ম তৈরি করে একটি নতুন রাজনৈতিক দল দীর্ঘস্থায়ী হবে কি না, তা নিয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের স্পষ্ট সন্দেহ রয়েছে। অনেকে বলছেন, জনগণ বিকল্প চায়, কিন্তু কেবল বিরোধিতা নয়-জনগণ চায় গঠনমূলক প্রস্তাব, স্বচ্ছ নেতৃত্ব ও সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা।
এনসিপির ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে তারা কেমন রাজনৈতিক নীতি ও দর্শন জনগণের সামনে হাজির করতে পারে তার ওপর। আপাতত, আ.লীগবিরোধিতা যতটা তাদের পরিচিতির ভিত্তি হয়েছে, ততটাই ভবিষ্যতে চ্যালেঞ্জও হয়ে উঠতে পারে যদি তারা নিজস্ব রাজনৈতিক দর্শনের অভাব পূরণ না করে।