ঢাকা ০৬ ডিসেম্বর, ২০২৫
সংবাদ শিরোনাম
ফ্রস্ট ব্লাস্ট টি-২০: রানার্স-আপ বসুন্ধরা স্ট্রাইকার্স হ্যাটট্রিকে নায়ক নেইমার, অবনমন দুঃস্বপ্ন এড়ানোর স্বপ্নে সান্তোস ওমানকে ১৩–০ গোলে উড়িয়ে জুনিয়র বিশ্বকাপে প্রথম জয়ের স্বাদ বাংলাদেশের ‘গাজায় অভিযান আরও শক্তিশালী হবে’—হামলার পর হুঁশিয়ারি ইসরায়েল প্রতিরক্ষামন্ত্রীর ভারত থেকে দেশে ফিরেছেন ১৮৬ বাংলাদেশি, বিএসএফ বলছে ‘স্বেচ্ছায় প্রত্যাবর্তন বাড়ছে’ ‘নির্বাচন ছাড়া বিকল্প নেই’- জাতীয় প্রেস ক্লাবে মান্না আরও ৩৬ আসনে প্রার্থীর নাম প্রকাশ করল বিএনপি, মোট তালিকা ২৭২ ঢাকায় আসছেন জুবাইদা রহমান, অসুস্থ খালেদা জিয়াকে নিয়ে লন্ডনে ফেরার প্রস্তুতি ২০২৫ সালে প্রতিদিন পাঁচ লাখ ক্ষতিকর ফাইল শনাক্ত করেছে ক্যাসপারস্কি আদিয়ালা কারাগারে ইমরান খানকে দেখে বললেন বোন উজমা—‘তিনি পুরোপুরি সুস্থ’

ডেঙ্গুতে রাজধানীতে হাহাকার, দুই সিটির ব্যর্থতায় বাড়ছে মৃত্যু

#

নিজস্ব প্রতিবেদক

২৮ জুলাই, ২০২৫,  10:55 PM

news image

নগরবাসীর নাভিশ্বাস ওঠানো ডেঙ্গু জ্বরে প্রতি বছরই রাজধানী ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনের বাসিন্দারা পড়ছেন চরম ভোগান্তিতে। বর্ষা এলেই শহরজুড়ে শুরু হয় এডিস মশার দৌরাত্ম্য। হাসপাতালে ঠাঁই মেলে না, ডাক্তাররা হিমশিম খান, আর প্রতিদিনই লাফিয়ে বাড়তে থাকে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা।

গত ১০ বছরে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন মশা নিধনে ব্যয় করেছে প্রায় ৮৩০ কোটি টাকা। কিন্তু এত বড় অংকের বাজেটেও নগরবাসী মশা ও ডেঙ্গুর যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পায়নি।

ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন (ডিএনসিসি) মশা নিধনে বরাদ্দ দিয়েছে ৫৬০ কোটি টাকার বেশি, আর ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন (ডিএসসিসি) বরাদ্দ দিয়েছে প্রায় ২৭০ কোটি টাকা।

তথ্য অনুসারে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ডিএনসিসি বরাদ্দ পায় ১১০ কোটি টাকা। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ডিএসসিসি বরাদ্দ পায় ৪৪ দশমিক ৪৭ কোটি টাকা। 

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রাক-বর্ষা জরিপ বলছে, ঢাকার ১৩টি ওয়ার্ডে ডেঙ্গুবাহী এডিস মশার লার্ভার ঘনত্ব ২০ শতাংশ এর বেশি, যা চরম ঝুঁকিপূর্ণ বলে বিবেচিত।

ঢাকা উত্তর এর ওয়ার্ডগুলো হচ্ছে ১২, ২, ৮, ৩৪, ১৩, ২২ নং ওয়ার্ড  ও ঢাকা দক্ষিণের ৩১, ৪১, ৩, ৪৬, ৪৭, ৪, ২৩ নং ওয়ার্ড। সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ উত্তর সিটির ১২নং ও দক্ষিণ সিটির ৩১ ও ৪১নং ওয়ার্ড (ব্রুটো ইনডেক্স ২৬ দশমিক ৬৭ শতাংশ)।

নগরের বাসিন্দারা বলছেন, সিটি কর্পোরেশনের কার্যক্রম কেবল চোখে দেখানোর জন্য। ওষুধ ছিটানো হয় নিয়মিত, এমন দাবি থাকলেও বাস্তবে তা দেখা যায় না।

মিরপুরের ব্যবসায়ী জুয়েল রানা বলেন, ঘরেই শান্তি নেই, দোকানেও মশার কামড়ে অতিষ্ঠ। কয়েল, স্প্রে কিছুই কাজ করে না।

বনশ্রী এলাকার গৃহিণী রেহানা খাতুন বললেন, দিনে-দুপুরেও মশার কামড়ে বাচ্চাদের ঘুমানো যায় না। ওরা আসে, ধোঁয়া ছড়িয়ে চলে যায়।

যাত্রাবাড়ীর চাকরিজীবী মঞ্জুর হোসেন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “মশাই এই শহরের সবচেয়ে নিরাপদ প্রাণী! সিটি কর্পোরেশনের ওষুধ ছিটানোর কর্মীদের দেখা মেলে না।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কীটতত্ত্ববিদ ড. কবিরুল বাশার বলেন, “সিটি কর্পোরেশনকে গুরুত্ব সহকারে চিরুনি অভিযান চালাতে হবে। প্রজননস্থল ধ্বংসে উদ্যোগ না নিলে আগস্ট-সেপ্টেম্বরে ডেঙ্গুর অবস্থা ভয়াবহ হবে।”

গত বছরগুলোতে ডিএনসিসি ও ডিএসসিসি ব্যাঙ ছাড়ানো, ড্রোন ব্যবহার, জিঙ্গেল বাজানোসহ নানা ‘সৃজনশীল’ উদ্যোগ গ্রহণ করলেও কার্যকর কোনো ফল আসেনি।

ডিএসসিসি খাল ও ড্রেনে ব্যাঙ ছাড়ে, ডিএনসিসি ড্রোন দিয়ে মশার উৎস খোঁজে— কিন্তু বাস্তবে তার কোনো কার্যকর ফল মিলেনি।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, ২০২৫ সালের শুরু থেকে ১৪,০৬৯ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন। শুধু জুন মাসেই আক্রান্ত ৫,৯৫১ জন। জুলাই মাসও আশঙ্কাজনক।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এভাবে চলতে থাকলে আগস্ট ও সেপ্টেম্বর মাসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে।

ডিএসসিসি প্রশাসক মো. শাহজাহান মিয়া বলেন, দুটি স্তরে আমরা কাজ করছি- নিয়মিত ও বিশেষ অভিযান। তবে নাগরিকদেরও সচেতন হতে হবে।

ডিএনসিসি প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ বলেন, আমাদের কর্মীরা মাঠে কাজ করছে। নাগরিকদের আমরা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকতে আহ্বান জানাচ্ছি।

ডেঙ্গু পরিস্থিতি যেন এখন নিয়মিত দুর্যোগ। প্রতিবছর কোটি কোটি টাকা ব্যয় হলেও প্রতিরোধ কার্যক্রম কেবল কাগজে কলমে সীমাবদ্ধ। নাগরিকদের ভোগান্তির সীমা নেই। প্রয়োজন বাস্তবভিত্তিক, বিজ্ঞানের ওপর নির্ভর করে সমন্বিত পদক্ষেপ, যাতে নগরবাসী সত্যিই স্বস্তি পায়।

logo

সম্পাদক ও প্রকাশক : তানভীর সানি