ডেস্ক রিপোর্ট
২৯ জুলাই, ২০২৫, 9:30 PM
খসড়া চূড়ান্ত না হলে ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক রূপরেখা অনিশ্চিত
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের উদ্যোগে চলমান সংলাপ থেকে তৈরি হওয়া জুলাই সনদের খসড়ার ভূমিকা ও উপসংহার রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে পাঠানো হয়েছে। দলগুলোর বেশিরভাগই এতে মৌলিক আপত্তি না জানালেও কিছু বিষয়ে লিখিত মতামত দেবে এনসিপি ও জামায়াত।
কমিশন জানিয়েছে, খসড়া সনদের পূর্ণরূপে ঐকমত্য হওয়া বিষয়গুলো পরে যুক্ত করা হবে। এখন কেবল ভূমিকা ও উপসংহারের খসড়া দেওয়া হয়েছে। এই খসড়ার বিষয়ে লিখিত মতামত জমা দেওয়ার শেষ দিন আগামীকাল বুধবার।
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) যুগ্ম আহ্বায়ক জাভেদ রাসিন বলেন, কমিশন ছয়টি সিদ্ধান্ত গ্রহণ পদ্ধতির কথা বললেও আলোচনা ছাড়াই হঠাৎ খসড়া প্রকাশ করেছে, যা একতরফা ও গ্রহণযোগ্য নয়। তিনি বলেন, যে বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে, তা নির্বাচনের আগেই আইনগত ভিত্তি পেতে হবে।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান নির্বাচন প্রসঙ্গে বিচারবিভাগ থেকে আরও দুই সদস্য যুক্ত করে র্যাংক চয়েস ভোটিং পদ্ধতিকে কার্যকর বলে উল্লেখ করেন তিনি।
জামায়াতের নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মো. তাহের বলেন, অধিকাংশ দল কেয়ারটেকার সরকারের পক্ষেই অবস্থান নিয়েছে। তিনি বলেন, বিচারপতিদের যুক্ত করা হলে রাজনৈতিক প্রভাব ও হর্স ট্রেডিংয়ের ঝুঁকি কমবে। তবে তিনি সতর্ক করে বলেন, জুলাই সনদের খসড়া অসম্পূর্ণ ও কিছু অংশ বিপজ্জনক, এটি চূড়ান্ত হলে দলটি আপত্তি জানাবে।
তাহের জানান, জামায়াত নিজস্ব একটি সনদের খসড়া তৈরি করছে এবং তা কমিশনে জমা দেবে।
এনসিপির সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেন, আগের তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থার ‘বিচারপতি বাধ্যবাধকতা’ এখন বাদ দেওয়া হয়েছে। প্রস্তাবিত নতুন কাঠামোতে রাজনৈতিক বাছাই কমিটি একটি নাম বাছাই করবে, একমত না হলে ভোট হবে।
আখতার বলেন, আইনগত ভিত্তির জন্য ‘লিগাল ফ্রেমওয়ার্ক অর্ডার’ ও সংবিধান সংশোধনের কথাও প্রস্তাব করেছেন তারা। তিনি বলেন, ভবিষ্যতের কোনো সরকার যেন এই সংস্কারগুলো উপেক্ষা করতে না পারে-এই নিশ্চয়তা থাকা জরুরি।
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার, উচ্চকক্ষ, প্রোপোরশনাল রিপ্রেজেন্টেশন পদ্ধতি নিয়ে এখনও পূর্ণ ঐকমত্য হয়নি। তবে অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে। আমরা আশা করি কমিশন সেগুলো যুক্ত করবে।
দলটির নির্বাহী সমন্বয়কারী আবুল হাসান রুবেল বলেন, ভূমিকার ভাষা ও শব্দচয়ন আরও পরিচালিত করা দরকার।
এবি পার্টির প্রধান মুজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, ত্রয়োদশ সংশোধনীর পথেই ফিরে যাওয়ার জন্য বিচার বিভাগের ভূমিকা জরুরি। কেয়ারটেকার বাছাইয়ে র্যাংক চয়েস পদ্ধতি যুগান্তকারী পদক্ষেপ হতে পারে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
বিএলডিপির চেয়ারম্যান শাহাদাত হোসেন সেলিম বলেন, সব নিবন্ধিত দল থেকে নয়, কেবল সংসদীয় দল থেকে প্রার্থী তালিকা নেওয়া হোক। কারণ, অনেক নিবন্ধিত দল শুধু কাগজে-কলমেই আছে।
তিনি আরও বলেন, বাছাই কমিটির পাঁচ সদস্যের মধ্যে চারজনের সম্মতির বিধান কঠিন বাস্তবতা। তারা চান তিনজনের মতেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব হোক।
সবার বক্তব্যের সারসংক্ষেপে উঠে এসেছে-তত্ত্বাবধায়ক সরকার ইস্যুতে এখনই রাজনৈতিক ঐকমত্যে পৌঁছাতে না পারলে রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ দীর্ঘমেয়াদি অনিশ্চয়তায় পড়বে। আগামীকাল রাজনৈতিক দলগুলোর লিখিত মতামতের পর হয়তো জুলাই সনদের চূড়ান্ত কাঠামো স্পষ্ট হবে।