
নিজস্ব প্রতিবেদক
২০ মার্চ, ২০২২, 4:19 PM

সাংবাদিক সংগঠনের নামে সারাদেশে চলছে ব্যাপক অপতৎপরতা
এ্যাডভোকেট মো. রাসেদ উদ্দিন সাংবাদিক,কলামিষ্ট ও সম্পাদক দৈনিক বিশ্ব মানচিত্র চেয়ারম্যান- মানবাধিকার সংস্থা ”সিপিআরএস” সদস্য- শ্রম ও জনশক্তি বিষয়ক কেন্দ্রীয় উপ কমিটি, বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ ।
সম্প্রতি সারাদেশে কতিপয় প্রতারক সাংবাদিক সংগঠনের নামের আগে বাংলাদেশ, ঢাকা, জাতীয় শব্দগুলো জুড়ে দিয়ে ভূঁইফোড় সংগঠনের বাহারি নামকরণ করেন যেন এটি একটি সরকারি সংস্থা । এরপর অফিস ও সাইনবোর্ড দিয়ে সদস্য বানানোসহ বিভাগ,জেলা এবং উপজেলা পর্যায়ে কমিটি দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে বিপুল অংকের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন । এসব ভূঁইফোড় সাংবাদিক সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতাগণ অশিক্ষিত-অল্প শিক্ষিত এবং সরকারী অনুমোনহীন কিংবা অনুমোদন থাকলেও অখ্যাত সংবাদ মাধ্যমের নামধারী সাংবাদিকদের টার্গেট করে প্রতারণার জাল বিস্তার করলেও সম্প্রতি অসাবধানতা বশত: মূলধারার পেশাজীবি কিছু তরুন সাংবাদিক এদের প্রতারণার জালে জড়িয়ে যাচ্ছে। যার ফলে সাংবাদিকতার মত মহৎ পেশা আজ হুমকির মুখে পড়েছে। মূলধারার পেশাজীবি তরুন এসব সাংবাদিকগণ যখন সাংবাদিক সংগঠক নামক প্রতারকদের সংগঠনে বুঝে কিংবা না বুঝেই যোগ দিচ্ছেন অথবা সহযোগিতা করেন তখনই প্রতারকদের প্রতারণার পালে হাওয়া লাগে। আর একে পুঁজি করে প্রতারক চক্র প্রতারনার কাজটি সুনিপুনভাবে করে যাচ্ছে ।
ডাক্তার,ইঞ্জিনিয়ার,শিক্ষক,আইনজীবি,ব্যাংকার, পুলিশসহ সর্বমহলে স্বীকৃত যেকোন ভিন্ন ভিন্ন পেশায় যোগদানের ক্ষেত্রে প্রাথমিক যোগ্যতা হিসাবে বয়স ও শিক্ষাগত যোগ্যতার বিভিন্ন স্তরকে বাধ্যতামূলক করা হয়েছে । কিন্তু সরকারী নীতিমালা না থাকার কারণে সাংবাদিকতা পেশায় যোগদানের ক্ষেত্রে বয়স ও শিক্ষাগত যোগ্যতা বাধ্যতামূলক নয় । যার ফলে অল্প শিক্ষিত-অশিক্ষিত এবং যেকোন বয়সের অপেশাদারি মানসিকতার ব্যক্তিগণ কুটকৌশলে অনায়াসে সাংবাদিকতা পেশায় ঢুকে পড়ছে । যে কারণে সাংবাদিকতার মত মহান পেশার প্রতি সমাজে আজ নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। সাংবাদিকের জন্য বিয়ের প্রস্তাব দিলেও এখন প্রশ্ন করা হয় লেখা পড়া করেছেতো । অথচ একটু ভেবে দেখুনতো লেখাপড়া জানা ছাড়া সাংবাকিতা করা আদৌ সম্ভব কি না ? কিন্তু পরিতাপের বিষয় হলো আজকাল ফুটপাতের ফল ও চা-পান দোকানীরাও টাকার বিনিময়ে সংবাদ মাধ্যমের আইডি কার্ডের অধিকারি হয়ে সম্মানের সাথে নিজেদেরকে সাংবাদিক হিসেবে পরিচয় দিয়ে মহান পেশা সাংবাকিতাকে কলংকিত করে যাচ্ছে সগৌরবে।
আমি একাধিক ভূঁইফোড় সাংবাদিক সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতাকে চিনি ও জানি যারা সাধারণ সাংবাদিকদের সাথে প্রতারণা করে অর্থ হাতিয়ে নিয়ে নিজের আখের গোছাচ্ছে। এদের মধ্যে অনেকের লেখাপড়াও সংগঠন পরিচালনার জন্য যথেষ্ট নয়। অনেকে বৈধ কোন সংবাদ মাধ্যমের মালিক কিংবা সংবাদকর্মী না হয়েও বাহারি চটকদার ভূঁইফোড় সাংবাদিক সংগঠনের কর্ণধার বটে। সাংবাদিকবৃন্দের কল্যাণের কথা বলে সংগঠনের নাম ভাংগিয়ে অবৈধ তদ্বির বাণিজ্য ও চাঁদাবাজি করে নিজের কল্যাণ নিশ্চিত করতে এরা সদা তৎপর আছে। এদের বৈধ কোন আয় না থাকায় অসচ্ছল জীবন যাপনে অতিষ্ট হয়ে এই প্রতারণার পথ বেছে নিয়েছে। মহামারি করোনা পরিস্থিতিতে সরকারীভাবে সাংবাদিকদের নামে কিছু অর্থ ও খাদ্য সামগ্রী বরাদ্ধ দেয়া হয়। সেই সুযোগে এসব কথিত সাংবাদিক সংগঠনের নেতারা সংগঠনের সদস্যদের নামের তালিকা দিয়ে উল্লেখিত অনুদান এনে কাউকে না দিয়ে একা আত্মসাৎ করেছেন মর্মেও অনেকের নামে অভিযোগ রয়েছে। এরা উক্ত সংগঠনের সদস্য , বিভাগ, জেলা ও উপজেলা কমিটি প্রত্যাশীদের কাধে ভর করে তাদের প্রদত্ত টাকায় সংসার চালায়। যারা নিজের সংসার চালাতে অন্যের উপর নির্ভর করেন তারা সাধারণ সাংবাদিকের কল্যাণে অর্থ ব্যয় করে কিভাবে কাজ করবে ? এরা অনেকে সংগঠনের এমন নামকরণ করেন যে নামের সাথে কর্মসূচী কিংবা কাজের পরিধির কোন মিল নেই। যেমন,একটি জেলা বা থানার নামে সংগঠন/প্রেসক্লাব তৈরী করে টাকার বিনিময়ে সারাদেশে সদস্য তৈরীসহ কমিটি দিয়ে যাচ্ছেন । সরকারী মিডিয়াভূক্ত একটি জাতীয় দৈনিক পত্রিকা সম্পাদনা করার সুবাদে এরকম অনেক সংগঠকের সাথে আমার কথা ও পরিচয় হয় । অনেকে ফোন দিয়ে আমার সম্পাদিত পত্রিকায় কাজ করার আগ্রহ প্রকাশ করলে আমি সাংবাদিকতা বিষয়ে তার পূর্ব অভিজ্ঞতা সম্পর্কে জানতে চাই, তখন তাদের মধ্যে অনেকে জানান তারা বিভিন্ন সাংবাদিক সংগঠনের নেতা । বৈধ কোন প্রতিষ্ঠানের মালিক কিংবা সংবাদকর্মী না হয়ে সাংবাদিকবৃন্দের নেতাগিরি কিভাবে করছেন প্রশ্ন করলে তারা সন্তোষজনক কোন জবাব না দিয়ে প্রসঙ্গ এড়িয়ে যেতে চেষ্টা করেন যা মহান এই পেশার জন্য অতিব হতাশা ও লজ্জা জনক। তবে সংবাদকর্মীদের অধিকার ও সার্বিক কল্যানার্থে সাংবাদিক সংগঠনের অবশ্যই প্রয়োজন রয়েছে । দুই যুগের অধিক সময় ধরে সংবাদপত্র শিল্পের বিভিন্ন শাখায় সরব পদচারনার সুবাদে আমার ক্ষুদ্র অভিজ্ঞতায় মনে হয় একটি সাংবাদিক সংগঠন নিম্নোক্ত লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের লক্ষে আত্মপ্রকাশের মাধ্যমে কর্মসূচী গ্রহন করলে সাধারণ সংবাদর্কীরা অনেকাংশে উপকৃত হবে ।
১. সংবাদকর্মী ও সংবাদমাধ্যম শিল্পের সার্বিক উন্নয়নকল্পে একটি সরকারি নীতিমালা প্রনয়নের জন্য সরকারের প্রতি সাংগঠনিকভাবে অনুরোধ/দাবী জনানো ।
২. সংবাদকর্মীগণ অন্যায়ভাবে কোন মিথ্যা মামলা কিংবা হামলার শিকার হলে তাৎক্ষনিক তার সরব প্রতিবাদসহ ভূক্তভোগীকে প্রয়োজনীয় সহযোগীতা প্রদান করার ব্যবস্থা গ্রহন করা ।
৩. সংবাদকর্মীদের পেশাগত দক্ষতা বাড়ানোর লক্ষে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষনের ব্যবস্থা সহ দেশ,জাতি ও সমাজের কল্যাণে নিবেদিতপ্রান হয়ে কাজ করার অনুপ্রেরণা মূলক মোটিভেশন দেয়া।
৪. সংগঠনের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় একটি ফান্ড গঠন করে সেখান থেকে সদস্য ও তার পরিবারের সদস্যের জন্য শিক্ষা ,চিকিৎসাসহ অন্যান্য সুযোগ সুবিধা নিশ্চিতকল্পে কাজ করা । প্রয়োজনে সহজ শর্তে বাড়ি,গাড়িসহ অন্যান্য বৈধ খাতে লোন প্রদানের ব্যবস্থা করা ।